হাজার নদীর দেশ বাংলাদেশ। কথাটা কতটা ঠিক এ নিয়ে নানা মত রয়েছে। আপনি যদি এর সত্যতা দেখতে চান, তাইলে দেশের মধ্যে একবার বিমানে ভ্রমন করিয়েন। বিমানের জানালার পাশে বসে নিচে তাকালেই বুঝতে পারবেন, আসলে আমাদের দেশটা কী সত্যিই নদীমাতৃক? তবে বাংলাদেশে ঠিক কত নদী আছে তার সঠিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে নেই। কোন নদী কোথা থেকে উৎপত্তি হয়ে কোথায় শেষ হয়েছে কিংবা একটি নদী আরেকটি নদীকে কোথায় অতিক্রম করেছে এসব যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ এখনো অধিকাংশের কাছে অজানা। অনেক গবেষকদের মতে বাংলাদেশে উপনদী ও শাখানদীর মোট সংখ্যা দুইশত পচিঁশটি। তবে নদী, উপনদী ও শাখানদীর সর্বমোট সংখ্যা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে যথেষ্ট মতদ্বৈততা আছে। একটি নদী থেকে অসংখ্য নদী সৃষ্টি হয়েছে। আবার কোন কোন নদী থেকে খাল বা ছড়া উৎপন্ন হয়েছে। এগুলোও প্রাকৃতিক নদীর অন্তর্ভুক্ত। যেমন- কর্ণফুলী নদী। মোহনা থেকে কাপ্তাই বাঁধ পর্যন্ত এই নদীতে অন্তত বিশ পচিঁশটি ছোটবড় উপনদী এসে মিশেছে।এসব নদীর মধ্যে কোনটা বড় কোনটা ছোট বলা কঠিন। তবে অনুমান ও হিসাব কষে বাংলাদেশে কমপক্ষে সাতশটি নদী রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এই হিসাব থেকে বাংলাদেশকে হাজার নদীর দেশ বলা যেতে পারে।
বাংলাদেশের নদী-নালাগুলো দেশের সর্বত্র সমভাবে বণ্টিত নয়। দেশের উত্তরভাগের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ক্রমান্বয়ে দক্ষিণভাগের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে নদ-নদীর সংখ্যা এবং আকার দুটাই বৃদ্ধি পেতে থাকে।যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালীতে রয়েছে অজস্র নদী। এসব নদীর নামকরণও ঠিকমত হয়নি। আবার কোন কোন নদীর বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন নাম। বাংলাদেশের নদ-নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার। ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া, আঁকাবাঁকা মৌসুমি খাড়ি, কর্দমপূর্ণ খালবিল, যথার্থ দৃষ্টিনন্দন নদ-নদী ও এদের উপ-নদী এবং শাখা নদী সমন্বয়ে বাংলাদেশের বিশাল নদীব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। কিছু কিছু স্থানে যেমন- পটুয়াখালী, বরিশাল এবং সুন্দরবন অঞ্চলে নদীনালা এত বেশি যে, সে অঞ্চলে প্রকৃতই নদীজালিকার সৃষ্টি হয়েছে। নদীব্যবস্থার দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের নদীমালাকে চারটি প্রধান নদীব্যবস্থা বা নদী প্রণালিতে বিভক্ত করা যেতে পারে যথা-১. ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী প্রণালি, ২. গঙ্গা-পদ্মা নদী প্রণালি, ৩. সুরমা-মেঘনা নদী প্রণালি এবং ৪. চট্টগ্রাম অঞ্চলের নদ-নদীগুলো। বাংলাদেশের নদীমালার মধ্যে দৈর্ঘ্যের দিক থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বিশ্বের ২২তম (২ হাজার ৮৫০ কিলোমিটার) এবং গঙ্গা নদী ৩০তম (২ হাজার ৫১০ কিলোমিটার) স্থানের অধিকারী। বাংলাদেশের প্রধান নদী চারটি- পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র (যমুনা), ও কর্ণফুলী। এরপর আসে তিস্তা, গড়াই, মধুমতী, রুপসা, আড়িয়াল খাঁ, কুমার, আত্রাই, কীর্তনখোলা, বিষখালী ইত্যাদি নদ-নদীর নাম।
বাংলাদেশ আশেপাশের চারটি দেশ যথা- চীন, ভুটান, নেপাল ও ভারতের ১.৫৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার অববাহিকার পানি নিষ্কাশনের আধার। বিপুল জলরাশি (প্রায় ৬ মিলিয়ন কিউসেক পানি) গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা নদী ও তাদের শাখা-প্রশাখা দ্বারা প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে নামক বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। প্রতিবছর প্রায় আড়াই বিলিয়ন টন পলি বহন করছে এই নদীগুলো, কিন্তু উজানে বেশ কয়েকটি প্রধান প্রধান নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশ এখন পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিকভাবে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই আমাদের নদীর জীবন প্রবাহ নিয়ে ভাবনায় ফেলে দিছে। কারণ নদী কেবল প্রকৃতির নয়, মানুষেরও। আর মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।ভৌগোলিক কারণেই আমাদের ভূ-খণ্ডের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর ৮৫% ভারত থেকে প্রবাহিত হয়ে এসেছে। আবার ভারতীয় ভূ-খণ্ড থেকে আসা নদীগুলোর এক তৃতীয়াংশ নেপাল এবং এক দশমাংশ ভুটান থেকে প্রবাহিত। আমাদের সীমানার চারপাশের ভূ-খণ্ডগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক নদী এসে মিশেছে আমাদের ভূ-খণ্ডে। কেবল ভারতীয় ভূ-খণ্ডের ৫৪টি নদী এবং সে সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তি লাভ করা সবগুলো ছোট বড় নদী মিলিয়ে প্রকৃত অর্থেই নদ-নদীর এক জল ছড়িয়ে রয়েছে পুরো ভূ-খণ্ডে।
বাংলাদেশের নদী নিয়ে অনেক কথা বলা হল কিন্ত এখনো নদীর সঙ্গা জানা হলনা। সাধারণত নদী মিষ্টি জলের একটি প্রাকৃতিক জলধারা যা ঝরণাধারা, বরফগলিত স্রোত অথবা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়ে প্রবাহ শেষে সাগর, মহাসাগর, হ্রদ বা অন্য কোন নদী বা জলাশয়ে পতিত হয়। মাঝে মাঝে অন্য কোন জলের উৎসের কাছে পৌছানোর আগেই নদী সম্পূর্ণ শুকিয়ে যেতে পারে। নদীকে তার গঠন অনুযায়ী শাখানদী, উপনদী, প্রধান নদী, নদ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা যায়। আবার ভৌগোলিক অঞ্চলভেদে ছোট নদীকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।উপনদী হলো জল-বিভাজিকার একটি প্রকরণ। বৃহদায়তন নদীর একটি ক্ষুদ্রতর ধারা এসকল উপনদী; কয়েকটি উপনদী মিলিত হয় এক একটি বৃহদাকার নদীর সাথে।যে সকল নদী ঝরণাধারা, হ্রদ, বরফগলিত স্রোত ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন না হয়ে অন্য কোন নদী থেকে উৎপন্ন হয় তাকে শাখানদী বলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ধলেশ্বরী যমুনার প্রধান শাখানদী। এছাড়াও মধুমতী, মাথাভাঙ্গা, কপোতাক্ষ নদ, পশুর নদ, বেতনা নদী ইত্যাদি পদ্মার শাখানদী। নদী নদী যে অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করে তাকে নদীর উৎস এবং যে স্থানে সমুদ্রে বা হ্রদে মিলিত হয় সেই স্থানকে মোহনা বলে। নদীর চলার পথে কখনও কখনও ছোট ছোট অন্যান্য নদী বা জলধারা এসে মিলিত হয়ে প্রবাহ দান করে- এগুলো উপনদী নামে পরিচিত। একটি নদী এবং এর উপনদীসমূহ একত্রে একটি নদীপ্রণালী বা নদীব্যবস্থা গঠন করে। ভূ-পৃষ্ঠ কখনও পুরোপুরি সমতল নয়। ফলে বর্ষণসৃষ্ট জলধারা ঢালুতম পথে ভূ-পৃষ্ঠের একাধিক ঢাল পরিচ্ছেদনের ফলে সৃষ্ট অবতল-নিচু অংশে প্রবাহিত হওয়ার প্রবণতা প্রদর্শন করে। নদী গঠনের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত আয়তন ও গতিবেগসম্পন্ন একাধিক প্রবাহের মিলিত ধারা যা অন্তঃস্থ ভূমি ও শিলাকে ক্ষয় করে খাতের সৃষ্টি করে এগিয়ে যেতে পারে। নদীর একটি উৎস আধার থাকে যা নদীকে নিয়মিত প্রবাহ যোগান দেয়। যেমন গঙ্গা নদীর উৎস গঙ্গোত্রী নামক হিমবাহ এবং ব্রহ্মপ