মামুনুর রাশিদ,দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ ভাঙাচোরা জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরটিতেই অনেক দিন ধরে বাস করতেন গোলেজান বেওয়া। বয়স এখন ৮০ ছুঁই ছুঁই। জানা যায় অনেকদিন আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে সন্তানও থাকে এই ঝুপড়ি ঘরে একা রেখে অন্যত্র বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। বয়স্ক ভাতার টাকা দিয়ে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছেন।বৃদ্ধা গোলেজান বেওয়ার বাড়ি দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে বৃদ্ধ বয়সেও ভালো একটি ঘরে থাকার সৌভাগ্য হয়নি। পুরাতন, ভাঙ্গা ও জীর্ণশীর্ণ টিনের ঘেরাও করা এই ঘরেই তার বসবাস, বৃষ্টি এলে তাকে ভিজতে হয়, ঝড় এলে ভয়ে থাকতে হয়। ঘরেও নাই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।ঘর নিয়ে এমন কষ্টের কথা জানতে পারে স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠন “ পাশে দাঁড়াও” সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।পরে পাশে দাঁড়াও এর পক্ষ থেকে সকাল থেকে ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরে গোলেজান বেওয়ার কাছে হস্তান্তর করেন। ঘর পেয়ে গোলেজান বেওয়া খুশিতে আত্মহারা হয়ে অশ্রুশিক্ত নয়নে বলেন “মোক দেখার কাহো নাই বাহে, খুব কষ্ট করি আছিনু ঝুপড়িটাত, এখন নয়া ঘর পানু বাকি জীবনটা এনা আরামে থাকির পারিম, মুই সারাজীবন দোআ করিম তোমার তনে ” দেশে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় মানুষকে সচেতন ও সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ২০২০ইং সালের ৬ই মার্চ যাত্রা শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি। সংগঠনটিরর যাত্রা শুরু কিছুদিন পরেই সংগঠনে কাজ করতে এগিয়ে আসেন উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ।সংগঠনটি গঠন করার সময় করোনা যুদ্ধে মাত্র ৫ জন সেচ্ছাসেবক নিয়ে কাজ শুরু করা সংগঠনটির বর্তমানে সেচ্ছাসেবক সংখ্যা প্রায় ১২০ জন। শুরু থেকেই করোনা সংকট মোকাবেলায় নানান উদ্যোগ গ্রহণ ও কাজের মাধ্যমে আলোচনায় আসে ‘পাশে দাঁড়াও’ নামে এই সেচ্ছাসেবী সংগঠন টি।সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে চিরিরবন্দর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে করোনা সংকটে ফ্রী এ্যাম্বলেন্স সার্ভিস, হুইল চেয়ার বিতরন, খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, গৃহ নির্মান , চিকিৎসা সহায়তা, রমজান মাসজুড়ে ইফতার বিতরন, কন্যাদ্বায় গ্রস্থ পিতাকে আর্থিক সহায়তা, শিক্ষা সহায়তা প্রদান সহ অনেক ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।“পাশে দাঁড়াও”সংগঠন এর আহব্বায়ক মাহাফুজুল ইসলাম আসাদ বলেন, সংকটে, দুর্যোগ কিংবা করোনা মহামারিতে “পাশে দাঁড়াও” সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অসহায়, ছিন্নমূল মানুষের পাশে আছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় অসহায় মা গোলেজান বেওয়ার ঘর নির্মান করে হস্তান্তর করা হলো। সামনের দিনগুলোতেও যেকোনো সময়ে প্রত্যয়ী যোদ্ধারা অসহায়, দুস্থ, ছিন্নমূল মানুষের পাশে থাকবে।“পাশে দাঁড়াও” টিমের যুগ্ন- আহব্বায়ক প্রদীপ কুমার বলেন, গত বছর করোনার প্রথম থেকেই “পাশে দাঁড়াও” সংগঠনটি মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।এরই অংশ বিশেষ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। যে কোন দুর্যোগে আমরা এসব মানুষের পাশে দাড়িয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই।এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সময় টিভির প্রতিনিধি গোলাম নবী দুলাল। আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ন আহব্বায়ক প্রদীপ কুমার শাহা, সামিউর রহমান রিমন, সদস্য দৌলাতুন নাহার সাথী, ভরত রায় প্রত্যয়, গোলাম মোস্তফা নীরব, এম.এ সবুজ, সম্পদ শাহ, বিক্রম সরকার, আক্তার হোসেন, শাহীন শাহ, জয় শর্মা, সোহান, আসিফ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।