এমন অনেক কবিতা আছে যা দু চার লাইন লিখে মুহুর্তে ছিড়েও ফেলেছি।অসমাপ্ত একটি কবিতাও আছে, যেটি নীল খামে উড়ে গেছে সীমান্ত পেরিয়ে।
বিনোদিনীকে নিয়ে কবিতা লিখতে যেয়ে কখন যে রাত গড়িয়ে ভোর হতো একমাত্র ফজরের আযান আমাকে সেটা জানান দিতো।
কখন যে ছেড়া কাগজের স্তুপ থেকে বাবা আমার লেখা কবিতাগুলো পড়ে ফেলেছে বুঝতেই পারিনি।
আর সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায়।পরদিনই বিনোদিনীর বাবা লালু দাসকে আশু তলব করা হয় ইউপি কার্যালয়ে।
আমার প্রভাবশালী চেয়ারম্যান বাবার হুমকিতে জীবন বাঁচাতে রাতেই বিনোদিনীর পরিবার দেশান্তরী হয়।গরীব কৃষক লালু দাস ফেলে রেখে যায় তার বাবার হাতের কুঁড়ে ঘর, কয়েক কানি ধানিজমি, গবাদিপশু আর আমার জন্য পাপের প্রায়শ্চিত্ত !
বাবা বলতো ওরা নিচু জাত, আমাদের সাথে যায় না, তারপর ধর্মেও সনাতন
তুমি ওসব ভুলে যাও, তোমার জন্য দেবো এনে ধনীর দুলালী বাছাধন।অনেক বছর বাদে আজ হঠাৎ মালোপাড়ায় বিনোদিনীর ছোট কাকা নিলু দাসের সাথে দেখা আমাকে দেখেই ভয়ে কাচুমাচু, ভাবছে আমাকেও এবার দেশ ছাড়তে হয় কি না !
অভয় দিয়ে বললাম কেমন আছো নিলু কাকা ? কোথায় থাকো আর লালু কাকারাই বা কোথায় থাকে ?
অনিচ্ছা সত্বেও নিলু কাকা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল শুনতে চান ছোট সাহেব ! শুনুন তবে…
বড় দা এখন নবদ্বীপের বাসিন্দা, ওখানেই ছোট একটা কাজ জুটিয়ে নিয়েছে, বিনোদিনীকে বিয়েও দিয়েছে।বিনোদিনী এখন কৃষ্ণনগরে ওর শ্বশুরবাড়ীতে থাকে, ওর দুটো সন্তানও হয়েছে
নিলু কাকা আরও বলল…বিয়ে হয়ে যাবার পর বিনোদিনী দাস ওর স্বামীর পদবিতে হয়েছে বিনোদিনী রাজবংশী।
মনে মনে ভাবছি, একেই বলে কপাল
যাকে বলে বিধির বিধান !
নইলে বাবা যাকে নিচু জাত বলে অসম্মান করতো
কপাল গুণে সেই আজ রাজবংশী !
হায়রে আমার পিতা !
বংশ দিয়ে কখনও যায় কি জেতা ?
ভাবছি যুগে যুগে এভাবেই হয়তো প্রভাবশালী চেয়ারম্যানরা কাজী নূর, বিনোদিনী দাসদের প্রেম ভালোবাসাকে হত্যা করে যাবে !
ধর্মের বেড়াজালে আটকে স্বর্গীয় প্রেমের কবর রচনা করবে।আর লালু দাসদের ভিটে মাটি ছাড়া করে দেশত্যাগে বাধ্য করবে।সেই সাথে আমার মতো স্বঘোষিত কিছু মহাপুরুষ চিরকুমার হয়ে থাকবে চিরকাল, অনন্তকাল।
বাস্তবতার নিরিখে একটি অসাধারণ কাহিনী এবং চমৎকার লেখন প্রয়াস।