ডা.এম.এ.মান্নান,টাংগাইল জেলা প্রতিনিধিঃআমার সৌভাগ্য হয়েছে, এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি উভয় সিস্টেমে সিনিয়র চিকিৎসকদের অধীনে রোগিলিপি নেয়া শেখা ও লেখার। এক ডাকসাইটে এলোপ্যাথিক অধ্যাপকের সঙ্গে কিছুদিন কাজ করেছি। তাঁর প্রচুর রোগি ছিল। তিনি একসঙ্গে চারজন করে রোগি দেখতেন। প্রত্যেক রোগিকে পৃথকভাবে জিজ্ঞেস করে, পৃথকভাবে পরীক্ষা শেষে টেবিলে বসে চারটি ব্যবস্থাপত্র লিখতেন। প্রত্যেকটি ব্যবস্থাপত্রে প্রত্যেক রোগির লক্ষণ ও পরীক্ষায় প্রাপ্ত উপসর্গসমূহ ঠিক ঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতেন। আমি চেক করে দেখেছি, তিনি নির্ভুলভাবে লিখতেন।
অত্যন্ত মেধাবী ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী এই অধ্যাপকের রোগিলিপি লেখার কায়দা আমাকে অনেকদিন ভাবিয়েছে। পরবর্তীতে আমার অশীতিপর হোমিওপ্যাথিক গুরুর অধীনে যখন রোগীলিপি লেখা শুরু করি, আমি রোগি সামনে নিয়ে জিজ্ঞেস করে করে রোগিলিপি লিখতাম।
কিন্তু গুরু বাধা দিলেন, বললেন আগে রোগির সকল বিবরণ শুনে ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষাশেষে টেবিলে বসে একবারে রোগিলিপি লিখতে। কিন্তু এভাবে আমি পারতাম না। কারণ রোগির বলা সকল লক্ষণ মনে থাকতো না। কিন্তু তাঁর বক্তব্য ছিল, এভাবে জিজ্ঞেস করে করে লিখলে, রোগির লক্ষণ বর্ণনার স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হবে। তাতে লক্ষণের ক্রমোৎপত্তির চিত্রটি পাওয়া যাবে না।
আমি ততদিনে এমবিবিএস পাশ করে ডিএইচএমএস চূড়ান্তবর্ষে পড়ছি। আমার একটু আঁতে ঘা লাগলো। ভাবলাম আমার এলোপ্যাথিক অধ্যাপক একসঙ্গে চারটি রোগি দেখে নির্ভুলভাবে চারটি ব্যবস্থাপত্র লিখতে পারেন। আর আমি একবারে একটি মাত্র রোগির রোগবিবরণী শুনে তা একবারে লিখতে পারব না! চেস্টা শুরু করলাম এবং অচিরেই তা সুষ্ঠুভাবে করতে সক্ষম হলাম। গুরু খুশী হলেন, বললেন তুমি পারবে এবং তোমাকে পারতেই হবে।
ঐ প্র্যাকটিসের গুরুত্ব এখন বুঝতে পারি। রোগিলিপি নিতে হবে রোগির সঙ্গে গল্প করার মতো। হাতে কোন কাগজপত্র, কলম না নিয়ে। তাতে রোগিচিত্রটি পরিপূর্ণভাবে অবিকৃত অবয়বে ধরা যাবে। মনোযোগের সঙ্গে রোগির বিবরণী শোনা ও কিছুটা অধ্যবসায় করলেই তা সম্ভব। রোগির রোগাবস্থার প্রকৃত বিবরণ পেতে রোগির আস্থাও অর্জন করতে হয়। আর এজন্য চিকিৎসকের ব্যক্তিত্ব ও রোগির প্রতি সহানুভূতি ও মমত্ববোধ (Empathy) কাজ দেয়।
এটি সর্বসম্মত যে, যথাযথ রোগিলিপি গ্রহন, সঠিক ঔষধ নির্বাচন সহ পরবর্তী পুরো চিকিৎসাকার্যটিকে সহজ করে দেয়। কিন্তু রোগিলিপি গ্রহণে মেটিরিয়া মেডিকা, রেপার্টরী ও প্র্যাকটিস অব মেডিসিনের একটা সুসংহত ও সুসমন্বিত জ্ঞানেরও প্রয়োজন। তাহলে রোগিলিপি গ্রহণকালেই অনেক লক্ষণের পরিপূর্ণতা, আনুষঙ্গিকতা, সাধারনতা/অসাধারণতা যাচাই করে নেয়া সম্ভব হয়। আর তাতে সঠিক ঔষধ নির্বাচনকার্যও সহজ হয়ে উঠে।
লেখকঃ
ডা.শেখ ফারুক এলাহী
সহ সভাপতি
বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ