অবিশ্বাস্য হলে ও সত্য, যশোরের শার্শা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৩ জন শিক্ষকের সার্ভিস বই হারিয়ে গেছে ।উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলছেন, তাকে ফাঁসাতে কে বা কারা এই সার্ভিস বই গুলো চুরি করেছে । সার্ভিস বই চুরি বা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি গত ৪/১১/২০২১ ইং তারিখে শার্শা থানায় একটি জিডি করেছেন । জিডি নং ১৯৮ ।সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন, সরকারি চাকুরীজীবীদের সার্ভিস বই তার স্ব স্ব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যক্ষের ধনের মত আলমারি বা লকারে সংরক্ষণ করে থাকেন । সরকারি চাকুরীজীবীদের অন্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চাকুরীর দলিল এই সার্ভিস বই কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য করো ব্যবহার বা সংরক্ষণ করার কোন সুযোগ নেই ।
একজন সরকারি চাকুরীজীবীর চাকুরী জীবনের পেশাগত সকল তথ্য উপাত্ত ধারাবাহিক ভাবে তার সার্ভিস বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়। একজন সরকারি চাকুরীজীবীর হৃতপিন্ড হলো তার সার্ভিস বই । প্রত্যেক বছরে একবার এবং প্রয়োজনে যে কোন সময়ে কর্তৃপক্ষ তার অধিনস্ত কর্মচারীর সার্ভিস বইটি হালফিল করে থাকেন ।একজন সরকারি চাকুরীজীবীর ব্যক্তিগত তথ্য,পেশাগত তথ্য, আর্থিক সুবিধাদির সকল বিবরণ সার্ভিস বইতে ধারাবাহিক ভাবে চাকুরীর শুরু হতে শেষ দিন পর্যন্ত লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে ।সার্ভিস বই এতোবেশী গুরুত্বপূর্ণ যে, একজন সরকারি কর্মচারীর অবসর কালীন আর্থিক সুবিধাদির পুঙ্খানুপূঙ্খ ও চুলচেরা হিসাব করা হয় এই সার্ভিস বইয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে ।অথচ শার্শা উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ৪৩ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকের চাকুরীর দলিল উধাও হয়ে যাবার পর ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যশোর বিষয়টি জেনে ও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি । তিনি বিষয়টি গোপন রেখেছেন ।
সার্ভিস বই হারিয়ে যাওয়া শিক্ষকরা এখন অত্যন্ত হতাশার মধ্যে আছেন। অনেকে কান্নাকাটি করছেন। আবার অনেকে মনে করছেন সার্ভিস বই না পাওয়ায় হয়ত তাদের চাকুরী ও আর নেই । খবর নিয়ে জেনেছি, সার্ভিস বই হারিয়ে যাবার বিষয়টি যেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো না হয় সে জন্য ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে ।
উপজেলার সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন,উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম পূর্বে এই উপজেলায় সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পদোন্নতি পেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার হয়ে তিনি পুনরায় এই উপজেলায় ফিরে আসেন । আর এসেই শুরু করেন ‘টু পাইস কামানোর কাজ ’। শার্শা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১২৫ টি । তিনি বিদ্যালয় উন্নয়ন পরিক্লপনা যাকে ‘ স্লিপ ’ বলে এই খাত থেকেই স্কুল প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে চলতি বছরে আদায় করেছেন ।বিদ্যলয়ের ওয়াশব্লক, রুটিন মেইন্টেনেন্স, ক্ষুদ্রমেরামত, নতুন ভবন নির্মান, রেস্ট এন্ড রিক্রেয়েশন,ভ্রমন ভাতা,স্কুল কন্টিনজেন্সি, বিজয় ও শোক দিবসের বরাদ্দ সহ সকল খাতে নির্ধারিত পরিমান অর্থ নিয়েই তবে তিনি বিল ভাইচারে স্বাক্ষর করেন ।
উপজেলায় কর্মরত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সাথে এই অন্যায় কাজ নিয়ে তার সম্পর্ক একেবারেই শীতল পর্যায়ে পৌঁছেছে ।মাঝে মাঝে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের সাথে তার বাক বিতন্ডার খবর চাউর হয় । ক’দিন পর পর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষকদের বাড়িতে তার রাত্রী যাপনের খবর এখন শিক্ষকদের মুখে মুখে ।
৪৩ টি সার্ভিস বই খোয়ানো শিক্ষকদের এখন কী হবে ? এই শিক্ষকরা খুবই দুমড়ে মুষড়ে পড়েছেন । তাদের পাশে কেউ নেই ।
তারা কী করবে, কোথায় কার কাছে যাবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না । এই জটিল পরিস্থিতি সমাধানের উপায় দ্রুত বের হওয়া দরকার। সার্ভিস বই খোয়া যাবার খবরে অনেক শিক্ষক শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন ।বিষয়টির দ্রুত সুরাহা না হলে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হতে পারে।