সেলিম চৌধুরী নিজস্ব সংবাদদাতাঃ–
চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় রংমিস্ত্রী কিশোর আকিব হাসান (১৭) কে ছুরিকাঘাত করে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন হত্যা মামলার আসামী আমান উল্লাহ খান আমিন ওরফে রহমত উল্লাহ ওরফে আমির (২৪)।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক কৌশিক আহমেদ খন্দকার তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এর আগে গত শুক্রবার রাতে আসামী আমিন উল্লাহ খানকে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্তি পুলিশ সুপার তারেক রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ চট্টগ্রাম শহর থেকে গ্রেফতার করে। আসামী আমিন পটিয়া পৌর সদরের ৮ নং ওয়ার্ডের দক্ষিন গোবিন্দরখীল এলাকায় দীর্ঘ বছর ভাড়া বাসায় থাকলেও তার আসল বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। তার পিতার নাম মৃত আলমগীর খান। জবানবন্দি শেষে তাঁকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা তারিক রহমান বলেন, রং মিন্ত্রী আকিব হত্যার আসামী আমিন উল্লাহকে গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিতে চান। গতকাল বিকেলে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বিচারিক হাকিম কৌশিক আহমেদ খন্দকারের আদালতে হাজির করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আমিন উল্লাহ খানের স্ত্রীর সঙ্গে আকিবের অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে তিনি ওই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন।
জবানবন্দিতে জানা যায়, নিহত আকিব হাসান (১৭) ও খুনী আমিন উল্লাহ খান (২৪) দুইজনই পেশায় রংমিস্ত্রী। দুই জনেরই বাড়ি পাশাপাশি। গত ১ বছর আগে আকিব বাবার সাথে রাগ করে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। পরে আমিন আকিবের ঘরে থাকতে শুরু করে। এ সুযোগে আকিব আমিরের স্ত্রীর সঙ্গে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। আকিবের সাথে আমিরের স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আমিন আকিবকে তার বাসা থেকে বের করে দেয়। পরে আমিন তার স্ত্রীকে শ^াশুড় বাড়ি বাঁশখালিতে পাঠিয়ে দেয়। এরপরও আকিব আমিনের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক চালিয়ে যায়। গত ২৬ নভেম্বর শুক্রবার রাতে আমিন আকিবকে কৌশলে ফোন করে রঙের কাজ করার কথা বলে পাহাড়ী অঞ্চল হাইদগাঁও আশ্রয়ন প্রকল্পে নিয়ে যায়। তার আগে আমিন পটিয়া সদরের একটি দোকান থেকে ৬০ টাকা দামে একটি চাকু কিনে নেয়। আমিনের ডাকে সাড়া দিয়ে আকিব ওই এলাকায় গেলে আমিন তার স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার বিষয়টি তুললে উভয়ের মধ্যে কথকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আমিন আকিবকে চুরিকাঘাত করে। এসময় আকিবও আমিনকে পাল্টা চুরিকাঘাত করে। পরে আকিব মাঠিতে লুটে পড়ে গেলে আমিন গলা টিপে আকিবের হত্যা নিশ্চিত করে। এসময় আমিন আকিবের লাশটি আশ্রয়ন প্রকল্প নতুন ঘরের টয়লেটের রিংয়ের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে বালি চাপা দিয়ে রিংয়ের ঢাকনা লাগিয়ে দেয়। গত বৃহস্পতিবার আশ্রয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তি তার ঘর বুঝিয়ে নিতে গেলে দূর্গন্ধ পায়। এসময় টয়লেটের রিংয়ের ঢাকনা খুললে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহত আকিব হাসানের বাবা মোহম্মদ আলী হাসান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে পটিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।